আধুনিক জীবনে আমরা অনেকেই সূর্যের তীব্র আলো থেকে ত্বককে বাঁচাতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করি। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানি না, এই অদৃশ্য আল্ট্রাভায়োলেট (UV) রশ্মি কেবল ত্বক পোড়ানোর জন্যই দায়ী নয়, এটি ত্বকের ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগেরও কারণ হতে পারে। UV রশ্মি এতটাই শক্তিশালী যে তা আমাদের ত্বকের কোষের গভীরে প্রবেশ করে মারাত্মক ক্ষতি করতে সক্ষম। চলুন জেনে নেয়া যাক আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি কীভাবে ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় সে সম্পর্কে।
চিনে নিন UV রশ্মির প্রকারভেদ
সূর্যের আলোতে মূলত তিন ধরনের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থাকে: UVA, UVB এবং UVC।
- UVA রশ্মি: এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি এবং এটি ত্বকের গভীরে পৌঁছে যায়। এর প্রভাবে ত্বকে বয়সের ছাপ, যেমন বলিরেখা ও চামড়া ঝুলে পড়া ইত্যাদি দেখা দেয়। গাড়ির কাঁচ বা সাধারণ জানালার কাঁচ ভেদ করেও এই রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
- UVB রশ্মি: এটি ত্বকের উপরের স্তরে আঘাত হানে এবং সানবার্ন বা ত্বক পুড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ। এর ফলে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
- UVC রশ্মি: এটি সবচেয়ে শক্তিশালী ও ক্ষতিকর হলেও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল একে পুরোপুরি শোষণ করে নেয়, তাই এটি আমাদের কাছে পৌঁছাতে পারে না।
যেভাবে UV রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে
আমাদের ত্বক অসংখ্য কোষ দিয়ে তৈরি। যখন UV রশ্মি এই কোষগুলোতে পৌঁছায়, তখন তা কোষের ডিএনএ (DNA)-এর গঠন পরিবর্তন করে ফেলে। এই পরিবর্তনের ফলে ডিএনএ-তে ত্রুটিপূর্ণ বন্ধন বা “পিরিমিডিন ডাইমার” তৈরি হয়, যা কোষের স্বাভাবিক কাজে বাধা দেয়। যদিও এই ক্ষতি সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সার তৈরি করে না, তবে সময়ের সাথে সাথে বারবার ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোষে মিউটেশন বা স্থায়ী পরিবর্তন ঘটতে পারে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।
ফটো-এজিং: অকালে বুড়িয়ে যাওয়া
UV রশ্মি কেবল ক্যান্সারই নয়, এটি “ফটো-এজিং” বা অকাল বার্ধক্যেরও কারণ। আমাদের ত্বকের টানটান ভাব ও মসৃণতা ধরে রাখে কোলাজেন এবং ইলাস্টিন নামক দুটি প্রোটিন। UV রশ্মি এই দুটি উপাদানকে ভেঙে দেয়, ফলে ত্বক দ্রুত শিথিল ও বলিরেখাযুক্ত হয়ে পড়ে। এর কারণে মুখে দাগ, মেছতা এবং সানস্পটও দেখা দিতে পারে।
সানস্ক্রিন: রক্ষাকবচ
সানস্ক্রিন ব্যবহারের মাধ্যমে UV রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে অনেকাংশে বাঁচানো সম্ভব। বাজারে নানা ধরনের অ্যান্টি-এজিং ক্রিম পাওয়া গেলেও, ত্বককে ক্যান্সার এবং ফটো-এজিং থেকে বাঁচাতে সানস্ক্রিনই সবচেয়ে কার্যকর। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। তাই প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার অন্তত ২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত এবং দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকলে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর তা নতুন করে লাগাতে হবে। মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি, কারণ মেঘের আড়াল থেকেও UV রশ্মি আমাদের ত্বকে পৌঁছাতে পারে।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
যাদের ত্বক ফর্সা, তাদের ত্বকে মেলানিন কম থাকায় UV রশ্মির ক্ষতির ঝুঁকি বেশি। এছাড়া, যাদের পরিবারে ত্বকের ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদেরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
উপসংহার
আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রভাব হালকাভাবে নেওয়ার মতো বিষয় নয়। এটি ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করার পাশাপাশি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের জন্ম দিতে পারে। তবে সচেতনতা এবং কিছু সহজ অভ্যাস, যেমন নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা, ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে পারে। সুস্থ ও সুন্দর ত্বকের জন্য সানস্ক্রিনকে আপনার দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে তুলুন।