গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার বা পাকস্থলীর ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ, যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। পাকস্থলী শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা খাবার গ্রহণের পর তা সাময়িকভাবে ধারণ করে এবং পুষ্টির হজমে সাহায্য করে। গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার ঘটে যখন পাকস্থলীর দেয়ালে থাকা কোষগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভাজিত হয়ে একটি ম্যালিগনেন্ট বা খারাপ টিউমার সৃষ্টি করে। সঠিক সময়ে নির্ণয় করা হলে এটি সম্পূর্ণ সারিয়ে ফেলা যেতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে এমন কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়া একটি বড় কারণ। এই ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলীতে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘকালীন পাকস্থলীর প্রদাহ, তৃতীয়ত, ধূমপান, চতুর্থত, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস এবং পঞ্চমত, অত্যধিক লবণ, স্মোকড ও প্রিজার্ভড খাবার এবং কম ফলমূল ও শাকসবজি গ্রহণও এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
প্রাথমিক পর্যায়ে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের কোনো স্পষ্ট লক্ষণ থাকে না, কিন্তু কিছু উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যেমন, উপরের পেট ব্যথা, খাবার পর গ্যাস্ট্রিক অনুভব করা, অ্যাপেটাইটের অভাব, ওজন কমে যাওয়া, নষ্ট মেজাজ বা বমি, সহজে সারছে না এমন গ্যাসট্রিক সমস্যা, এবং মলের রং কালো হয়ে যাওয়া। এগুলি যদি আপনার মধ্যে দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার নির্ণয়ে উন্নত বিশ্বে একটি নতুন প্রযুক্তি এসেছে, যা গ্যাসট্রোক্লিয়ার নামে পরিচিত। এটি একটি রক্তপরীক্ষা, যা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের কোষ থেকে নির্গত মাইক্রো-আরএনএ পর্যবেক্ষণ করে। এটি গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের ৮৭% ক্ষেত্রে সঠিক ফল দিতে সক্ষম বলে দাবি করা হচ্ছে। হয়তো দ্রুত আমাদের দেশেও এই টেস্ট করা সম্ভব হবে।
গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য কিছু সহজ জীবনযাত্রার পরিবর্তন করতে হবে। প্রথমত, ধূমপান বন্ধ করুন, প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন, লবণের পরিমাণ কমান, এবং প্রতিদিনের খাদ্যে তাজা ফলমূল ও শাকসবজি যুক্ত করুন। এছাড়া, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনেই সব ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
যদি চিকিৎসক সন্দেহ করেন যে আপনি গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন, তাহলে তারা আপনাকে কিছু পরীক্ষার জন্য পাঠাতে পারেন, যেমন গ্যাস্ট্রিক এন্ডোস্কোপি বা বেরিয়াম মিল এক্স-রে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এগুলি করা যেতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের লক্ষণগুলি উপেক্ষা করা উচিত নয়। যত দ্রুত এটি সনাক্ত করা যাবে, তত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব এবং এতে ভালো ফলাফল আশা করা যায়। গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের শুরুতে নির্ণয় করা হলে এটি সম্পূর্ণভাবে প্রতিকারযোগ্য হতে পারে। এজন্য লক্ষণগুলো লক্ষ্য করে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।