বাংলাদেশে নারীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ জরায়ুমুখ ক্যান্সার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন নারী এ রোগে প্রাণ হারান। অথচ এটি প্রতিরোধযোগ্য একটি ক্যান্সার, যার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র হলো টিকা এবং নিয়মিত স্ক্রিনিং।
নারীদের নীরব ঘাতক
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের প্রধান কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV)। যৌন সংক্রমণের মাধ্যমে ছড়ানো এই ভাইরাসের নির্দিষ্ট কিছু ধরন, বিশেষ করে HPV-১৬ ও HPV-১৮, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বাল্যবিবাহ, কম বয়সে সন্তান জন্মদান, একাধিক সন্তান, ধূমপান এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার অভাব—এসব কারণে গ্রামীণ নারীরা তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
টিকা দেওয়ার সঠিক সময়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, HPV টিকা সবচেয়ে কার্যকর তখনই, যখন এটি যৌনসম্পর্ক শুরু হওয়ার আগে দেওয়া হয়।
৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েরা এ টিকার মূল লক্ষ্যগোষ্ঠী। এ বয়সে মাত্র দুই ডোজে পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়া যায়।
১৫ থেকে ২৬ বছর বয়সেও টিকা কার্যকর, তবে তখন তিন ডোজ দিতে হয়।
২৭ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীরাও চাইলে নিতে পারেন, তবে কার্যকারিতা তুলনামূলক কম হতে পারে।
চিকিৎসকরা বলছেন, সবচেয়ে ভালো সময় হলো কৈশোরকাল, বিশেষ করে বিয়ের আগেই টিকা নেওয়া।
প্রতিরোধে দ্বিমুখী কৌশল
শুধু টিকা নয়, নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্বও সমান। প্যাপ স্মিয়ার বা VIA টেস্টের মাধ্যমে জরায়ুমুখে প্রাথমিক পর্যায়ের অস্বাভাবিক কোষ শনাক্ত করা সম্ভব। সময়মতো চিকিৎসা নিলে ক্যান্সারে রূপ নেওয়ার আগেই প্রতিরোধ করা যায়।
বাংলাদেশে টিকার প্রাপ্যতা
কয়েক বছর আগে স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের জন্য এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি চালু করে সরকার। দশ বছর বয়সী সব মেয়েদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ইপিআই প্রোগ্রামের মাধ্যমে এক ডোজের এই টিকা দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে এই কর্মসূচি। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভ্যাকসিন বাজারে আসায় প্রাপ্যতাও বেড়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় উৎপাদন টিকাদানের খরচ কমাতে ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
সামাজিক চ্যালেঞ্জ
তবে সচেতনতার ঘাটতি এখনও সবচেয়ে বড় বাধা। অনেক পরিবার টিকা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারেন না, আবার অনেক নারী সামাজিক সংকোচে স্ক্রিনিং করতে চান না। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় কুসংস্কার, ভুল ধারণা ও স্বাস্থ্যসেবার সীমিত সুযোগ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।
উপসংহার
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। সময়মতো টিকা গ্রহণ ও নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এ রোগের মৃত্যুহার ব্যাপকভাবে কমানো সম্ভব। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভ্যাকসিন এ লড়াইকে আরও সহজ করে তুলেছে। এখন প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা ও নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সকলের দায়িত্বশীলতা।