ঝড়ের মুখোমুখি/

জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলোটা মুখে এসে পড়তেই চোখ মেলে তাকালাম। প্রতিদিনের মত আজকেও রিক্তার হাতের গরম চা নিয়ে বসেছিলাম বারান্দায়। সকালটা ছিল শান্ত, নরম হাওয়ায় মিশে ছিল ছোট্ট কিছু স্বপ্নের রেখা। কিন্তু কে জানত, কয়েক ঘণ্টা পরেই সবকিছু বদলে যাবে?

হাসপাতালের কনসালটেশন রুমটা আজ অদ্ভুত নীরব ছিল। ডাক্তার শান্ত, অনাগ্রহী গলায় বললেন, “আপনার ক্যান্সার হয়েছে।” কথাটা শেষ হতে না হতেই মনে হলো যেন শরীর থেকে সব রক্ত এক লহমায় শুকিয়ে গেল। শব্দটা ধাক্কা দিল বুকের ভেতর, গায়ের প্রতিটি রোমকূপে শীতলতা ছড়িয়ে দিল। চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে গেল রঙিন পৃথিবীটা।
আমি চুপ করে বসে ছিলাম। পাশে বসা রিক্তার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। সে আমার হাত ধরেছিল, কাঁপা কাঁপা সেই স্পর্শে ছিল এক ভয়াবহ অসহায়ত্ব। মনে হচ্ছিল, সময় থেমে গেছে। যেন কেউ আমার বুকের ভেতর ঘূর্ণিঝড় বইয়ে দিচ্ছে।

“ভয় পাবেন না,” ডাক্তার বলেছিলেন।
কিন্তু কে বোঝাবে তাকে, ভয় তো শুধু একটা অনুভূতি না—ভয় হলো একটা ছায়া, যে সমস্ত আলো কে গ্রাস করে।

রাতে ঘুমাতে পারিনি। ছেলের মুখটা বারবার চোখে ভেসে উঠছিল—ওকে স্কুলে নিতে না পারলে কী হবে? রিক্তার চোখে যেন হাজারো প্রশ্ন, যা কোনো উত্তর চায় না, শুধু পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি।

ক্যান্সার—শুধু এক রোগ নয়, এটা একটা বাস্তবতা, একটা যুদ্ধ। কিন্তু আমি জানি, আমি হারব না। কারণ আমার পাশে আছে ভালোবাসা, আছে একেকটা ছোট ছোট মুহূর্ত যেগুলো আমি হারাতে চাই না।
———————————————————————–

পরদিন সকালে, চায়ের কাপ হাতে আমি আবার বারান্দায় বসলাম। সূর্য তখনও উঠেছে আগের মতই। বাতাসে ছিল নতুন একটা প্রতিজ্ঞা—আমি লড়ব। যতদিন পারি, যতটা পারি।