ফুসফুসের স্মল সেল ক্যান্সার

আমাদের ফুসফুস শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বাতাস থেকে অক্সিজেন রক্তে পৌঁছে দেয় এবং রক্ত থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেয়। ফুসফুসের কিছু কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ও বিভাজনের ফলে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়।

গ্লোবোক্যান ২০২২ (GLOBOCAN 2022) এর তথ্য অনুসারে, ফুসফুসের ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি শনাক্তকৃত ক্যান্সারের মধ্যে অন্যতম এবং ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ। ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২.৫ মিলিয়ন নতুন ফুসফুসের ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং এর কারণে প্রায় ১.৮ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিসংখ্যান ফুসফুসের ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরে।

ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রকারভেদ

ফুসফুসের ক্যান্সার প্রধানত দুই প্রকার: নন-স্মল সেল ফুসফুসের ক্যান্সার (Non-Small Cell Lung Cancer – NSCLC) এবং স্মল সেল ফুসফুসের ক্যান্সার (Small Cell Lung Cancer – SCLC)। স্মল সেল ফুসফুসের ক্যান্সার তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেলেও এটি বেশ মারাত্মক। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় ১০ জনের মধ্যে একজনের স্মল সেল ক্যান্সার হয়ে থাকে। এই ধরণের ক্যান্সার খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর দুটি প্রধান উপপ্রকার হলো স্মল সেল কার্সিনোমা এবং কম্বাইন্ড স্মল সেল কার্সিনোমা।

ঝুঁকির কারণ

স্মল সেল ফুসফুসের ক্যান্সারের কোনো একক কারণ না থাকলেও, এর সাথে ধূমপানের গভীর যোগসূত্র রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে তামাক ব্যবহারের ফলে কোষের যে ক্ষতি হয়, তা কিছু কোষকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে এবং ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে। ধূমপান এই রোগের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। আপনি যত বেশি সময় ধরে এবং দিনে যত বেশি সিগারেট খান, ঝুঁকি তত বাড়ে।

অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়া।
  • কর্মক্ষেত্রে বা বাড়িতে রেডন (একটি তেজস্ক্রিয় গ্যাস), আর্সেনিক, অ্যাসবেস্টস, বেরিলিয়াম, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, নিকেল বা কয়লার ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসা।
  • বায়ু দূষণযুক্ত এলাকায় বসবাস করা।
  • বংশগতভাবে ফুসফুসের ক্যান্সারের ইতিহাস থাকা।
  • পূর্বে স্তন বা বুকে রেডিয়েশন থেরাপি নেওয়া।
  • এমফাইসিমা, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস বা যক্ষ্মার মতো ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হওয়া।

লক্ষণ ও উপসর্গ

স্মল সেল ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণগুলো সুনির্দিষ্ট নাও হতে পারে। কিছু সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে:

  • দীর্ঘস্থায়ী কাশি যা সময়ের সাথে আরও খারাপ হয়।
  • কাশির সাথে রক্ত বা মরিচা রঙের কফ বের হওয়া।
  • গভীর শ্বাস, কাশি বা হাসার সময় বুকে ব্যথা।
  • গলার স্বর কর্কশ হয়ে যাওয়া।
  • ওজন হ্রাস এবং ক্ষুধা কমে যাওয়া।
  • শ্বাসকষ্ট এবং দুর্বলতা অনুভব করা।
  • ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো ফুসফুসের সংক্রমণ যা সহজে সারে না বা বারবার ফিরে আসে।
  • হাঁপানির মতো কোনো কারণ ছাড়াই শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

গবেষকরা এখনও পর্যন্ত ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ, ভিটামিন বা ভেষজ প্রতিকার খুঁজে পাননি। তবে ঝুঁকি কমানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো সিগারেট, সিগার এবং পাইপের মতো তামাকজাত দ্রব্য পরিহার করা। পরোক্ষ ধূমপান এবং রেডনসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক এড়িয়ে চলাও জরুরি।

স্মল সেল ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রেডিয়েশন থেরাপি এবং  কেমোথেরাপি অন্যতম। রোগীর জন্য কোন চিকিৎসা সবচেয়ে উপযুক্ত হবে তা নির্ভর করে টিউমারের ধরন, আকার, অবস্থান, বিস্তৃতি, রোগীর বয়স এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর। আপনার ডাক্তার চিকিৎসার লক্ষ্য এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। নতুন নতুন চিকিৎসার অগ্রগতির ফলে স্মল সেল ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরা আগের চেয়ে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকতে পারছেন। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।