ভিটামিন ডি এবং ক্যান্সার

সূর্যের আলো থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ডি, যা আমাদের হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য হিসেবে পরিচিত, তা এখন ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধেও এক শক্তিশালী যোদ্ধা হিসেবে উঠে আসছে। সাম্প্রতিক গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন ডি-এর পর্যাপ্ত মাত্রা কেবল ক্যান্সার প্রতিরোধেই সাহায্য করে না, বরং ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে ভিটামিন ডি-এর ভূমিকা

শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের রক্তে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা বেশি, তাদের মধ্যে স্তন, ফুসফুস, মূত্রাশয়, কোলন এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কম। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি-এর পর্যাপ্ত মাত্রা স্তন ক্যান্সারের টিউমারের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়।

ভিটামিন ডি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের ছড়িয়ে পড়া রোধ করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, যা ক্যান্সার কোষকে শনাক্ত ও ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ভিটামিন ডি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যা কোষকে ক্ষতিকারক ফ্রি র‍্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে, ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

ক্যান্সার চিকিৎসায় ভিটামিন ডি-এর গুরুত্ব

বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় ভিটামিন ডি-এর মাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যেসব ক্যান্সার রোগীর শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম, তাদের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি বা ইমিউনোথেরাপির মতো চিকিৎসা ভালোভাবে কাজ করে না। অন্যদিকে, যাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা পর্যাপ্ত, তারা চিকিৎসায় ভালো সাড়া দেন।

একটি গবেষণায় ৮৮,০০০ ক্যান্সার রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চিকিৎসার আগে যাদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করা হয়েছিল, তাদের সামগ্রিক চিকিৎসায় ১৩% উন্নতি হয়েছে। এই উন্নতি কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি বা সার্জারি সব ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়েছে।

অনেক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এখন বিশ্বাস করেন যে, ক্যান্সার চিকিৎসা শুরু করার আগে রোগীর ভিটামিন ডি-এর মাত্রা পরীক্ষা করা এবং ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করা অপরিহার্য। এটিকে অবহেলা করা চিকিৎসাগত গাফিলতি বলেও মনে করেন অনেকে।

কীভাবে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করবেন?

ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎস হলো সূর্যের আলো। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট সরাসরি সূর্যের আলোতে থাকলে শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি তৈরি হয়। তবে, শীতকালে বা যারা বেশিরভাগ সময় বাড়ির ভেতরে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

সূর্যের আলো ছাড়াও কিছু খাবার থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে:

  • চর্বিযুক্ত মাছ
  • ডিমের কুসুম
  • মাশরুম
  • ভিটামিন ডি-ফরটিফাইড দুধ, দই এবং সিরিয়াল

যদি খাবার এবং সূর্যের আলো থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না পাওয়া যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।

সতর্কতা

যদিও ভিটামিন ডি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, তবে অতিরিক্ত মাত্রায় এটি গ্রহণ করা ক্ষতিকর হতে পারে। অতিরিক্ত ভিটামিন ডি কিডনিতে পাথর এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই, যেকোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শেষকথা

ভিটামিন ডি এবং ক্যান্সারের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা এখনও চলছে। তবে, বর্তমান তথ্য-প্রমাণ থেকে এটি স্পষ্ট যে, শরীরে ভিটামিন ডি-এর পর্যাপ্ত মাত্রা বজায় রাখা ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার পাশাপাশি ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে আমরা এই নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করতে পারি।