লাং ক্যানসারের অ্যাডভান্সড স্টেজে যে লক্ষণগুলি অবহেলা করা উচিত নয়

 

ফুসফুসের ক্যানসার, যা বিশ্বজুড়ে ক্যানসার-সম্পর্কিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ, প্রায়শই প্রাথমিক পর্যায়ে নীরব থাকে। এর ফলে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়। কিন্তু যখন রোগ অ্যাডভান্সড স্টেজে পৌঁছায়, তখন এর লক্ষণগুলি আরও প্রকট হয়ে ওঠে এবং দৈনন্দিন জীবনে গুরুতর প্রভাব ফেলে। এই লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ সঠিক সময়ে এগুলি চিনতে পারলে রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং প্রয়োজনীয় যত্ন নিশ্চিত করা সম্ভব।

ফুসফুসের ক্যানসারের অ্যাডভান্সড স্টেজের সাধারণ লক্ষণগুলি:

১. শ্বাসকষ্ট (Dyspnea): এটি ফুসফুসের ক্যানসারের অ্যাডভান্সড স্টেজের একটি অত্যন্ত সাধারণ এবং কষ্টদায়ক লক্ষণ। টিউমারের বৃদ্ধি ফুসফুসের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, বায়ুনালীতে বাধা সৃষ্টি করে অথবা ফুসফুসের চারপাশে ফ্লুইড জমা করে, যার ফলে শ্বাস নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়। এমনকি সামান্য পরিশ্রম বা বিশ্রামের সময়েও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

২. ক্রমাগত কাশি: ক্যানসারের অ্যাডভান্সড স্টেজে কাশি আরও তীব্র হতে পারে। এটি শুকনো কাশি হতে পারে, আবার কফযুক্ত কাশিও হতে পারে। অনেক সময় কাশির সঙ্গে রক্তও আসতে পারে, যা ‘হিমোপটিসিস’ নামে পরিচিত। রক্ত মিশ্রিত কফ বা গাঢ় লাল রক্ত দেখা গেলে তা একটি গুরুতর লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

৩. বুকে ব্যথা: টিউমার যখন বুকের ভেতরের স্নায়ু বা হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন বুকে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা একনাগাড়ে হতে পারে অথবা নির্দিষ্ট কিছু নড়াচড়ায় বাড়তে পারে। ব্যথা কাঁধ, পিঠ বা বাহুতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

৪. ক্লান্তি ও দুর্বলতা: ক্যানসারের অ্যাডভান্সড স্টেজে রোগীরা চরম ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করেন। ক্যানসার কোষগুলি শরীরের শক্তি শোষণ করে নেয়, যা রক্তাল্পতা (Anaemia) এবং ক্ষুধা হ্রাস করে। এর ফলে রোগীর দৈনন্দিন কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়।

৫. ওজন হ্রাস ও ক্ষুধামন্দা: অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমে যাওয়া ফুসফুসের ক্যানসারের একটি পরিচিত লক্ষণ। ক্যানসার কোষগুলির দ্রুত বৃদ্ধি শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, যার ফলে ক্ষুধা কমে যায় এবং খাবার হজমে সমস্যা হয়। এর সঙ্গে বমি বমি ভাবও থাকতে পারে।

৬. গিলতে অসুবিধা (Dysphagia): যদি টিউমার খাদ্যনালীর কাছাকাছি বৃদ্ধি পায় বা চাপ সৃষ্টি করে, তাহলে খাবার গিলতে অসুবিধা হতে পারে। এটি রোগীর খাবার গ্রহণকে আরও কঠিন করে তোলে।

৭. স্বর পরিবর্তন বা ফ্যাসফেসে কণ্ঠস্বর: যদি ক্যানসার ভোকাল কর্ড নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুতে (Recurrent Laryngeal Nerve) চাপ সৃষ্টি করে, তাহলে গলার স্বর ফ্যাসফেসে বা কর্কশ হয়ে যেতে পারে।

৮. শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা: ফুসফুসের ক্যানসার মেটাস্ট্যাসিস (Metastasis) হয়ে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়লে সেইসব স্থানে ব্যথা হতে পারে। যেমন, হাড়ে ছড়িয়ে পড়লে হাড়ে তীব্র ব্যথা, মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়লে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা খিঁচুনি হতে পারে।

৯. শোথ (Edema): ক্যানসার যখন শরীরের ওপরের অংশে রক্ত ​​প্রবাহে বাধা দেয়, তখন মুখ, ঘাড় এবং বাহুতে ফোলা দেখা যেতে পারে, যাকে সুপেরিয়র ভেনা কাভা সিন্ড্রোম (Superior Vena Cava Syndrome) বলা হয়।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

যদি উপরের উল্লিখিত লক্ষণগুলির মধ্যে এক বা একাধিক লক্ষণ আপনার বা আপনার পরিচিত কারো মধ্যে দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা ধূমপান করেন বা ধূমপানকারীদের কাছাকাছি থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলি আরও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত।

অ্যাডভান্সড স্টেজের ক্যানসারের চিকিৎসা ও যত্ন:

অ্যাডভান্সড স্টেজের ফুসফুসের ক্যানসারের ক্ষেত্রে চিকিৎসার মূল লক্ষ্য থাকে রোগীর কষ্ট কমানো এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। এর জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার (Palliative Care) বা উপশমকারী যত্নের ওপর জোর দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে ব্যথা নিয়ন্ত্রণ, শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য অক্সিজেন থেরাপি, পুষ্টির সহায়তা এবং মানসিক সমর্থন।

ফুসফুসের ক্যানসারের অ্যাডভান্সড স্টেজের লক্ষণগুলি খুবই কষ্টদায়ক হতে পারে। এই সময় রোগীর শারীরিক ও মানসিক যত্ন অত্যন্ত জরুরি। পরিবার এবং চিকিৎসকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রোগীর জীবনের এই সময়টা শান্তিপূর্ণ এবং যতটা সম্ভব আরামদায়ক করে তোলা সম্ভব। মনে রাখবেন, লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতনতা জীবন বাঁচানোর প্রথম ধাপ।