ছোটো ছোটো সিদ্ধান্তে বড় বড় প্রাপ্তি

ক্যান্সার যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গায় জীবনকে অন্ধকারে ঢেলে দিতে পারে। তামাকের ধোঁয়া ফুসফুসে ঢুকলেই ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রক্তে মিশে কোষের নিয়ন্ত্রণের বারোট বাজিয়ে দেয়। গলা বা ফুসফুস, শ্বাসনালী বা খাদ্যনালী—তামাকের ধোঁয়া কোনো অঙ্গকেই বাঁচতে দেয় না। প্রতি সিগারেটে লুকিয়ে থাকে অদৃশ্য এক বিপদ, যা ধীরে ধীরে ক্যান্সারের কারণ ঘটায়।

খাবার-দাবারের ভুল পছন্দও বিপদ ডেকে আনে। অতিরিক্ত লবণ মিশিয়ে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাবার, তেলে ভাজা ফাস্ট ফুড—এসব খেলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা কোষগুলোকে অসহায় করে, আর তখনই ক্যান্সার আক্রমণ করার সুযোগ পায়।

পরিবেশ দূষণও কিন্তু হালকা করে দেখার বিষয় নয়। শিল্প কারখানার ধোঁয়া, রাসায়নিক বর্জ্য, গাড়ির বিক্ষিপ্ত গ্যাস—এসব বাতাসে মিশে নদী, মাঠ, প্রাণিজগতের ক্ষতি করে এবং শেষমেশ আমাদের খাবারের সঙ্গে ঢুকে শরীরে পৌঁছায়। রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা দূষিত নদীর মাছ যতই সুস্বাদু হোক না কেন, তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিষ আমাদের কোষগুলোয় ধীরে ধীরে ক্ষতি করে, আর ক্যান্সারের পথ প্রশস্ত করে দেয়।

কিছু ক্ষেত্রে সংক্রমণ ও ভাইরাসও ক্যান্সারের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস লিভারের কোষগুলোকে ক্ষতবিক্ষত করে, যা লিভার ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যায়। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) জরায়ুমুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

কিছু ক্ষেত্রে জিনগত প্রবণতাও বড় কারণ হিসেবে কাজ করে। যাদের পরিবারে কারো আগে ক্যান্সার হয়েছে, তাদের ঝুঁকি একটু বেশি থাকে। যদিও জিনের বদল আমাদের হাতে নেই, নিয়মিত স্ক্রিনিং ও চেকআপ অনেক জীবন বাঁচাতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করলে চিকিৎসা অনেক সফল হয়।

সুতরাং প্রতিদিনের ছোট ছোট সিদ্ধান্তগুলোই জীবনের পথ নির্ধারণ করে। সিগারেট ছেড়ে দেওয়া, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য খাওয়া, দূষিত পরিবেশ থেকে দূরে থাকা, নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপ—এসব জীবনাচরণ এর পরিবর্তন সময়মতো করলে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করা খানিকটা সহজ হয়। জীবন একটাই, তাই ক্যান্সারকে ভয় না পেয়ে সাহসী পদক্ষেপ নিন। তাতেই মঙ্গল

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *