অবহেলিত কিন্তু আশ্চর্যজনক উপকারী কিছু ফল ও খাবার: ক্যান্সার প্রতিরোধে চ্যাম্পিয়ন

 

আমাদের চারপাশে এমন অনেক ফল ও খাবার আছে যেগুলো আমরা অবহেলা করি অথবা তেমন গুরুত্ব দিই না। অথচ গবেষণা বলছে, এই সাধারণ খাবারগুলো ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। চলুন আলোচনা করা যাক এমনই কিছু সাধারণত পাত্তা না দেওয়া অবহেলিত খাদ্য, যাদের আমরা প্রতিদিন খেতে পারি রোগ প্রতিরোধে এক শক্তিশালী ঢাল হিসেবে।

 

. পেঁপে (পাকা কাঁচা উভয়)

কার্যকারিতা:

  • পেঁপেতে থাকা এনজাইম প্যাপেইন  হজমে সহায়ক এবং অন্ত্রকে পরিষ্কার রাখে।
  • এতে প্রচুর লাইকোপেনবেটাক্যারোটিন থাকে, যা প্রোস্টেট, স্তন পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ব্যবহারবিধি:

  • সকালে নাস্তার সাথে কাটা পাকা পেঁপে খান।
  • কাঁচা পেঁপে রান্নায় ব্যবহার করুন।

 

. আমলকি

কার্যকারিতা:

  • আমলকি হলো প্রাকৃতিক ভিটামিন সি-এর রাজা
  • এতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যা কোষের ডিএনএ ক্ষয় ঠেকাতে সাহায্য করে।
  • লিভার ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যবহারবিধি:

  • প্রতিদিন এক চা চামচ শুকনো আমলকি গুঁড়ো গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন।
  • কাঁচা খাওয়াও যেতে পারে, লবণ-মরিচ দিয়ে।

 

. কালোজিরা

কার্যকারিতা:

  • থাইমোকুইনোন নামক উপাদান আছে যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করতে পারে।
  • গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে কার্যকর।

ব্যবহারবিধি:

  • রুটির সাথে বা মধুর সাথে কালোজিরা মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
  • ভর্তা বা ভাজিতে ব্যবহার করতে পারেন।

 

. হলুদ (বিশেষত কাঁচা হলুদ)

কার্যকারিতা:

  • হলুদের সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে।
  • এটি ব্রেন, ফুসফুস স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

ব্যবহারবিধি:

  • দুধে কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে পান করুন (প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক)।
  • রান্নায় কাঁচা বা গুঁড়ো হলুদ ব্যবহার করুন।

 

. তুলসী পাতা

কার্যকারিতা:

  • তুলসী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিক্যান্সার বৈশিষ্ট্যে ভরপুর।
  • এটি ওরাল ক্যান্সার ফুসফুসের ক্যান্সারে উপকারী বলে গবেষণায় প্রমাণিত।

ব্যবহারবিধি:

  • সকালে খালি পেটে ৪-৫টি তাজা তুলসী পাতা চিবিয়ে খান।
  • তুলসী চা বানিয়ে পান করা যেতে পারে।

 

. বাঁধাকপি শালগম

কার্যকারিতা:

  • এই জাতের সবজিতে থাকে গ্লুকোসিনোলেটস, যা ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে সহায়ক।
  • কোলন, ফুসফুস লিভার ক্যান্সারে প্রতিরোধমূলক ভূমিকা রাখে।

ব্যবহারবিধি:

  • হালকা ভাপে রান্না করে খাওয়া ভাল।
  • রস করে খাওয়া যেতে পারে।

 

. কাঁচা কলা

কার্যকারিতা:

  • এতে থাকা রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
  • ডায়াবেটিস কোলন ক্যান্সারে বেশ উপকারী।

ব্যবহারবিধি:

  • সিদ্ধ করে ভর্তা বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
  • ডাল দিয়ে রান্না করলেও উপকারীতা বজায় থাকে।

 

 

পরিশেষে বলা যায়, আমাদের প্রাত্যহিক খাদ্য তালিকায় থাকা এই সাধারণ খাবারগুলো কেবল পুষ্টিকরই নয়, বরং জীবন রক্ষাকারী। আধুনিক গবেষণা প্রমাণ করেছে, প্রতিদিনের খাবার যদি ঠিকমতো নির্বাচন করা যায়, তবে সেটিই হতে পারে ক্যান্সার প্রতিরোধের সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও কার্যকর উপায়।

বিশেষ পরামর্শ: চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোনো উপাদান মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ না করা এবং খাদ্য গ্রহণে বৈচিত্র্য ও পরিমিতি বজায় রাখা উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *