ক্যান্সার প্রতিরোধে সুস্থ জীবনের ১০টি সোনালী নিয়ম

 

মানবজীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ শব্দগুলোর একটি হলো “ক্যান্সার”। তবে সুখবর হলো—বিজ্ঞানের সর্বশেষ গবেষণাগুলো বলছে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাসে পরিবর্তন আনলেই এই মরণব্যাধির ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যান্সার রিসার্চ (AICR) দীর্ঘ গবেষণার ভিত্তিতে ক্যান্সার প্রতিরোধে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ দিয়েছে, যা আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, তবে সুস্থ জীবনযাপন শুধুই স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা হয়ে উঠবে।

১. সুস্থ ও নিয়ন্ত্রিত ওজন বজায় রাখা

স্থূলতা কেবলই বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয় নয়, বরং এটি শরীরের অভ্যন্তরে সৃষ্ট নানা সমস্যার মূল কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ওজন অনেক ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই শরীরের ওজন যেন বয়স, উচ্চতা ও শারীরিক গঠনের অনুপাতে থাকে, সে বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।

২. নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইকেল চালানো, নাচা বা যেকোনো রকমের শারীরিক পরিশ্রম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সপ্তাহে মোট ১৫০ মিনিটের মতো শারীরিক কার্যক্রম ক্যান্সার প্রতিরোধের পথে এক বড় পদক্ষেপ।

৩. সম্পূর্ণ শস্য, ফলমূল, শাকসবজি ও ডাল বেশি খান

ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যালসমৃদ্ধ খাবার যেমন—ওটস, বাদাম, কলা, লাউ, মসুর ডাল ইত্যাদি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধে সাহায্য করে। আপনার প্লেটের অর্ধেক যেন সবজি ও ফল দিয়ে পূর্ণ থাকে, এটি একটি সহজ কিন্তু কার্যকর নিয়ম।

৪. চর্বিযুক্ত ও চিনি-যুক্ত খাবার সীমিত করুন

প্যাকেটজাত খাবার, ফাস্টফুড, পেস্ট্রি, সফটড্রিংক—এইসব খাবারে থাকে উচ্চমাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও চিনি, যা শরীরকে ক্যালোরির অতিরিক্ত সরবরাহ করে এবং ওজন বাড়ায়। ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

৫. লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংস কম খান

গরু, খাসির মাংস নিয়মিত খাওয়ার সঙ্গে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। আর হটডগ, সসেজ বা প্রক্রিয়াজাত মাংস নিয়মিত খেলে এই ঝুঁকি আরও বাড়ে। তাই সপ্তাহে সীমিত পরিমাণে মাংস খাওয়া বাঞ্ছনীয়।

৬. চিনি-যুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন

সফট ড্রিংক, এনার্জি ড্রিংক, বোতলজাত জুস—সবগুলোতেই থাকে উচ্চমাত্রায় অ্যাডেড সুগার, যা শরীরের ক্যালোরি ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। তার বদলে সারা দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি, নারকেল পানি, গ্রিন টি বা নির্যাসজাত পানীয় গ্রহণ করা নিরাপদ ও উপকারী।

৭. মদ্যপান সীমিত করুন

অ্যালকোহলের সঙ্গে স্তন, লিভার, মুখ ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারের সম্পর্ক বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। সম্ভব হলে পুরোপুরি বন্ধ করুন। ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে বেঁচে থাকুন।

৮. পুষ্টির চাহিদা খাবার থেকেই পূরণ করুন, সাপ্লিমেন্ট নয়

প্রাকৃতিক খাবারে যে উপাদান রয়েছে, তা কোনো কৃত্রিম সাপ্লিমেন্ট দিয়ে পূরণ সম্ভব নয়। ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন হলে, প্রথমে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন এবং শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।

৯. মায়েদের জন্য: সন্তানকে স্তন্যদান করুন

মায়ের বুকের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মায়ের শরীরেও স্তন ক্যান্সারসহ কিছু রোগের ঝুঁকি কমায়। অন্তত ৬ মাস একটানা শিশুকে স্তন্যদান করা WHO-এরও সুপারিশ।

১০. ক্যান্সার থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের জন্য এই নিয়মগুলো মানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

ক্যান্সার চিকিৎসা শেষে যাঁরা জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে পা রাখেন, তাঁদের শরীর ও মন আরও বেশি সংবেদনশীল হয়। তাই উপরের সব নিয়ম মেনে চলা কেবল ক্যান্সার প্রতিরোধই নয়, বরং পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয় এবং অন্য দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে রক্ষা করে।

আপনি কোথা থেকে শুরু করবেন?

এই ১০টি সুপারিশ দেখে অনেকেরই মনে হতে পারে—”সবগুলো একসঙ্গে মানা কি সম্ভব?” একেবারেই নয়। আপনি একসাথে সব পরিবর্তন আনবেন না, বরং একেকটা অভ্যাস ছোট ছোট ধাপে গড়ে তুলুন। হয়তো আপনি এখনই নিয়মিত হাঁটেন, তাহলে খানাপিনা নিয়ে ভাবতে পারেন। কেউ কেউ হয়তো চিনি-যুক্ত পানীয় ত্যাগ করেছেন, এবার মাংস গ্রহণের পরিমাণ কমাতে পারেন।

আপনার শরীরই আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ। সেটিকে সুস্থ রাখার দায়িত্বও আপনার নিজের। আজ থেকে ছোট এক পা এগিয়ে যান সুস্থ জীবনের দিকে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *