আজকের দিনে ক্যানসার এমন এক রোগ, যা সারা বিশ্বে মানুষের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে অনেক ধরনের ক্যানসার নিরাময়যোগ্য হলেও প্রতিরোধের দিকে মনোযোগ দেওয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের প্রতিদিনের জীবনধারার কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব।
ক্যানসারের ঝুঁকির কারণগুলো দুই ভাগে ভাগ করা যায়—যেগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং যেগুলো আমরা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। নিয়ন্ত্রণযোগ্য ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে ধূমপান, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম ও মানসিক চাপের বিষয়গুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ধূমপান ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ। ফুসফুস ক্যানসারসহ একাধিক ধরনের ক্যানসারের সঙ্গে ধূমপানের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। অনেকে ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন, কারণ এটি নিঃসন্দেহে একটি কঠিন প্রক্রিয়া। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঠিক পরামর্শ, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং মানসিক সহায়তা পেলে ধূমপান ত্যাগ করা সম্ভব। তাই যারা ধূমপান ছাড়তে চান, তাদের উচিত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা।
সুষম খাদ্যাভ্যাসও ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন অন্তত পাঁচ সার্ভিং ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এসব খাবারে থাকা ফাইটোকেমিক্যালস নামক প্রাকৃতিক উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যানসার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, ফাইটোকেমিক্যালস খাবারের মাধ্যমেই গ্রহণ করা ভালো, সাপ্লিমেন্টের ওপর নির্ভর না করে। তাই আমাদের রান্নাঘরই হতে পারে সেরা ওষুধের ভাণ্ডার।
নিয়মিত ব্যায়ামও ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর। প্রতিদিন ১৫-৩০ মিনিটের মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম—যেমন দ্রুত হাঁটা বা সাইকেল চালানো—ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করলে শরীরে প্রদাহ কমে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। ব্যায়ামকে একপ্রকার ওষুধের মতো গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এটি বিনা খরচে আমাদের সুস্থ রাখতে সক্ষম।
এছাড়া মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাও সমান জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ শরীরে কর্টিসলসহ বিভিন্ন প্রদাহজনিত রাসায়নিকের মাত্রা বাড়ায়, যা ক্যানসারসহ হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। ধ্যান, যোগব্যায়াম, মেডিটেশন কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
সব মিলিয়ে, ধূমপান ত্যাগ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ—এই চারটি অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। নিজের ও পরিবারের সুস্থতার জন্য তাই আজ থেকেই স্বাস্থ্যকর জীবনধারা শুরু করা প্রয়োজন।