সেপ্টেম্বর মাস বিশ্বব্যাপী Prostate Cancer Awareness Month হিসেবে পালিত হয়। এর উদ্দেশ্য হলো পুরুষদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, সময়মতো পরীক্ষা করার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং প্রতিরোধ ও চিকিৎসার বিষয়ে তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া।
প্রোস্টেট ক্যান্সার কী?
প্রোস্টেট হলো পুরুষদের একটি ছোট গ্রন্থি যা মূত্রথলির নিচে ও মলদ্বারের সামনে অবস্থিত। এর মূল কাজ হলো বীর্যের একটি অংশ তৈরি করা। যখন এই গ্রন্থির কোষ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাকে প্রোস্টেট ক্যান্সার বলা হয়।
কোথায় হয়?
এটি শুধু পুরুষদের হয় এবং মূলত প্রোস্টেট গ্রন্থিতেই শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রোস্টেটের ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে চিকিৎসা না হলে শরীরের অন্য অঙ্গে যেমন হাড়ে বা লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কেন হয়?
প্রোস্টেট ক্যান্সারের সঠিক কারণ সম্পূর্ণ জানা যায়নি, তবে কিছু ঝুঁকির বিষয় রয়েছে:
- বয়স: সাধারণত ৫০ বছরের পর ঝুঁকি বাড়ে।
- পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারের কারও প্রোস্টেট বা স্তন ক্যান্সার থাকলে ঝুঁকি বেশি।
- জাতিগত কারণ: আফ্রিকান বংশোদ্ভূত পুরুষদের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি।
- ডায়েট ও জীবনযাপন: উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, শারীরিক অনিয়ম, ধূমপান ঝুঁকি বাড়ায়।
নির্ণয় কীভাবে করা যায়?
প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করতে কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়:
- PSA (Prostate-Specific Antigen) রক্ত পরীক্ষা: রক্তে PSA লেভেল বেড়ে গেলে ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।
- DRE (Digital Rectal Exam): ডাক্তার আঙুল দিয়ে প্রোস্টেট গ্রন্থির আকার ও অস্বাভাবিকতা পরীক্ষা করেন।
- বায়োপসি: সন্দেহজনক কোষ পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয়।
- ইমেজিং পরীক্ষা: MRI, CT স্ক্যান বা বোন স্ক্যান দ্বারা ক্যান্সার কতটুকু ছড়িয়েছে তা দেখা হয়।
প্রতিরোধের উপায়
যদিও শতভাগ প্রতিরোধ সম্ভব নয়, তবে কিছু অভ্যাস ঝুঁকি কমাতে পারে:
- সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা (শাকসবজি, ফলমূল, কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া)।
- নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার।
- বয়স ও পারিবারিক ইতিহাস অনুযায়ী নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
বাংলাদেশে প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রোস্টেট ক্যান্সারের জন্য বেশ কিছু আধুনিক চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে:
- সার্জারি: প্রোস্টেট গ্রন্থি অপসারণ (Radical Prostatectomy)।
- রেডিয়েশন থেরাপি: প্রাথমিক বা ছড়ানো ক্যান্সারে ব্যবহৃত হয়।
- হরমোন থেরাপি: টেস্টোস্টেরন কমিয়ে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ধীর করা হয়।
- কেমোথেরাপি: উন্নত পর্যায়ে প্রয়োগ করা হয়।
- টার্গেটেড থেরাপি ও নতুন ওষুধ: বড় হাসপাতাল ও ক্যান্সার বিশেষায়িত কেন্দ্রে সীমিতভাবে পাওয়া যায়।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BMU), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসমূহে, এবং বেসরকারি বিশেষায়িত ক্যান্সার হাসপাতালগুলোতে এই চিকিৎসা পাওয়া যায়।
উপসংহার
প্রোস্টেট ক্যান্সার একটি নীরব ঘাতক রোগ, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া সম্ভব। তাই ৪০ বছর বয়সের পর থেকে নিয়মিত চেক-আপ করা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সচেতনতা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। সেপ্টেম্বর মাসে এই সচেতনতা আমাদের সবাইকে মনে করিয়ে দেয় যে—সময়মতো পরীক্ষা জীবন বাঁচাতে পারে।