ক্যান্সার ব্যথা প্রশমনের উপায়

ক্যান্সার রোগীদের প্রায় ৬০–৯০% জীবনের কোনো পর্যায়ে মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথায় ভোগেন। এই ব্যথা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ও সামাজিক জীবনকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তাই কার্যকর ব্যথা নিয়ন্ত্রণ ক্যান্সার চিকিৎসার একটি অপরিহার্য অংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলেছে—সময়মতো সঠিক ওষুধ ও পদ্ধতি ব্যবহার করলে প্রতিটি ক্যান্সার রোগীর ব্যথা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
ওষুধভিত্তিক চিকিৎসা
হালকা ব্যথায়:
  • প্যারাসিটামল (অ্যাসিটামিনোফেন)
  • NSAIDs (যেমন ইবুপ্রোফেন)
মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথায়:
  • Opioids, বিশেষত ওরাল মরফিন
ওরাল মরফিন: ক্যান্সার ব্যথা নিয়ন্ত্রণের মূল সমাধান
  • WHO-র “Pain Ladder” অনুযায়ী তৃতীয় ধাপের ওষুধ।

     

  • তীব্র ব্যথা কমাতে সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ।

     

  • সহজে সেবনযোগ্য (ট্যাবলেট বা সিরাপ আকারে)।

     

  • রোগীর জীবনমান উন্নত করে।

     

বাংলাদেশে প্রাপ্যতা:
সাধারণ ফার্মেসিতে বিক্রি নিষিদ্ধ। কেবলমাত্র অনুমোদিত সরকারি হাসপাতাল ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেন্টারে পাওয়া যায়।
ঢাকা ভিত্তিক অনুমোদিত সরবরাহ কেন্দ্র:
  • বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BMU), শাহবাগ
    [প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেন্টার (ব্লক ই, ৪র্থ তলা, কক্ষ ৫০১), প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগ (ই-ব্লক, ৫ম তলা, কক্ষ ৬০২; বহির্বিভাগ-১, কক্ষ ৫১১)]

     

  • ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (DMCH) – প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট

     

  • জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী

     

  • আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতাল, উত্তরা

     

  • বাংলাদেশ প্যালিয়েটিভ ও সাপোর্টিভ কেয়ার ফাউন্ডেশন (PallCareBD), গুলশান

     

  • শান্তি অনকোলজি ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট, ধানমন্ডি

     

প্রাপ্তির নিয়ম:
  • কেবলমাত্র অনুমোদিত ডাক্তার প্রেসক্রাইব করতে পারেন।

     

  • রোগীর নাম, রোগের অবস্থা ও ডোজ বিশেষ রেজিস্ট্রেশন বইতে নথিভুক্ত করতে হয়।

     

  • একসাথে সীমিত ডোজ দেওয়া হয়, প্রয়োজনে নতুন প্রেসক্রিপশনে পুনরায় নিতে হয়।

     

  • চিকিৎসকের ফলো-আপ ছাড়া মরফিন ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ।

     

রোগীর উপকারিতা:
  • ব্যথা সহনীয় মাত্রায় কমায়।

     

  • খাওয়া-দাওয়া, ঘুম ও দৈনন্দিন কাজের ক্ষমতা বাড়ায়।

     

  • মানসিক চাপ কমায়।

     

  • পরিবারের জন্যও স্বস্তি আনে।

     

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি, ঘুমঘুম ভাব (ল্যাক্সেটিভ ও অ্যান্টি-ইমেটিক দ্বারা নিয়ন্ত্রণযোগ্য)।
ভুল ধারণা দূরীকরণ:
ক্যান্সার রোগীর ক্ষেত্রে সঠিক তত্ত্বাবধানে মরফিন আসক্তি সৃষ্টি করে না (ঝুঁকি <1%)।
অ্যাডজুভান্ট ওষুধ
  • স্নায়বিক ব্যথার জন্য গ্যাবাপেন্টিন বা অ্যামিট্রিপটাইলিন।

     

অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি
  • কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, সার্জারি: টিউমার ছোট হলে ব্যথা কমে।

     

  • নার্ভ ব্লক: স্থানীয়ভাবে ব্যথার সংকেত বন্ধ করা।

     

  • রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাব্লেশন (RFA): হাড়ে মেটাস্টেসিসজনিত ব্যথা কমানো।

     

জীবনধারা ও পরিপূরক থেরাপি
  • মেডিটেশন, যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমায়।

     

  • ভি-আকৃতির বালিশ বা বেড ক্র্যাডল রোগীকে আরাম দেয়।

     

  • গরম প্যাক খিঁচুনি কমায়; ঠাণ্ডা প্যাক প্রদাহ ও স্নায়বিক ব্যথা হ্রাস করে।

     

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
  • ব্যথা মূল্যায়ন: VAS বা NRS স্কেল ব্যবহার করা জরুরি।

     

  • ব্রেকথ্রু পেইন: হঠাৎ তীব্র ব্যথায় শর্ট-অ্যাক্টিং মরফিন কার্যকর।

     

  • বিশেষজ্ঞ পরামর্শ: জটিল ক্ষেত্রে পেইন স্পেশালিস্ট বা প্যালিয়েটিভ কেয়ার টিম অপরিহার্য।

     

উপসংহার
ক্যান্সার ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ওরাল মরফিন হলো “gold standard”। এটি সস্তা, কার্যকর ও নিরাপদ। নিয়মিত ডোজ সমন্বয়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণ থাকলে অধিকাংশ রোগীর ব্যথা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর মূল উদ্দেশ্য হলো রোগীর জীবনমান উন্নত করা। আপনি ক্যান্সারের রোগী হলে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে মরফিন ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

Leave a Comment