ড্যান্ডেলিয়ন রুট এক্সট্রাক্ট: কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রকৃতির গোপন হাতিয়ার

ক্যান্সারের চিকিৎসায় প্রকৃতি কখনো কখনো অবাক করা সম্ভাবনা দেখায়। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত আগাছা ভেবে ফেলে দেওয়া ড্যান্ডেলিয়ন (কুসুমকুমারী) গাছের মূলের নির্যাস (Dandelion Root Extract – DRE) ল্যাবরেটরিতে কোলন ক্যান্সারের কোষের ওপর অবিশ্বাস্য প্রভাব ফেলেছে।
গবেষণার ফলাফল সত্যিই চমকে দেওয়ার মতো—মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্যান্সার কোষের ৯০ শতাংশের বেশি ধ্বংস হয়ে যায় DRE-এর প্রভাবে। এর পেছনে রহস্য হলো কোষকে “প্রোগ্রামড মৃত্যু” বা অ্যাপোপটোসিসে ঠেলে দেওয়া। আরও আশ্চর্যের বিষয়, এটি কেবল একটি রাস্তা নয়, বরং একাধিক পথ ধরে ক্যান্সার কোষকে আক্রমণ করে—ক্যাসপেজ-নির্ভর ও ক্যাসপেজ-স্বাধীন দুই প্রক্রিয়াই একসাথে সক্রিয় করে।
আরও একটি বড় সাফল্য হলো, এই নির্যাস এমন ক্যান্সার কোষেও কাজ করেছে যেগুলোর মধ্যে p53 নামের গুরুত্বপূর্ণ টিউমার-সাপ্রেসর জিন কার্যকর ছিল না। এই জিনটি সাধারণত নষ্ট হয়ে যায় সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ও প্রতিরোধী ক্যান্সারগুলোতে। ফলে DRE-এর কার্যকারিতা বিশেষভাবে মূল্যবান।
প্রাণী পরীক্ষায়ও ইতিবাচক ফল মিলে গেছে। মানুষের কোলন ক্যান্সার কোষ ইঁদুরের শরীরে প্রতিস্থাপন করার পর দেখা যায়, DRE টিউমারের বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়, অথচ সুস্থ কোষ বা শরীরের অন্যান্য অংশের ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। ক্যান্সার চিকিৎসায় এ ধরনের বাছাই করা ক্ষমতা—অর্থাৎ কেবল অসুস্থ কোষকে আঘাত করা আর সুস্থ কোষকে রক্ষা করা—খুবই বিরল এবং অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত।
অবশ্য গবেষণাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, সীমাবদ্ধ শুধু ল্যাবরেটরি ও প্রাণী পরীক্ষায়। তবুও, এ ফলাফল ভবিষ্যতের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছে। যদি মানবদেহে এর কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা প্রমাণিত হয়, তবে ড্যান্ডেলিয়ন রুট এক্সট্রাক্ট হতে পারে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক শক্তিশালী উদ্ভিজ্জ অস্ত্র।

Leave a Comment