ক্যানসার বিনাশী সাতটি ফল

 

আজকের লেখায় এমন সাতটি ফল নিয়ে কথা বলব, যাদের প্রাকৃতিক গঠনেই লুকিয়ে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধের অসাধারণ ক্ষমতা। প্রশ্ন উঠতেই পারে—যে ফল কিংবা উদ্ভিদ নিজে তো কখনও মানবজাতির মতো করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয় না, তাহলে কীভাবে তারা এমন রাসায়নিক যৌগ তৈরি করে, যা ক্যানসার ধ্বংসে ভূমিকা রাখে?

আরেকটি জটিল প্রশ্নও আমরা ভেঙে ব্যাখ্যা করব—ফলে তো অনেক শর্করা থাকে, আর আমরা জানি ক্যানসার কোষ শর্করার জন্য পাগল। তাহলে এই ফলগুলো কীভাবে ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করে? চলুন একে একে জেনে নিই।

 

১. বেরি (বিশেষত ব্লুবেরি ও ব্ল্যাকবেরি)

বেরিগুলোর মধ্যে ব্লুবেরি ও ব্ল্যাকবেরিতে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় অ্যান্থোসায়ানিন নামের এক শক্তিশালী ফাইটোকেমিক্যাল। এটি ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দেয় এবং একইসঙ্গে আমাদের অন্ত্রের ক্ষুদ্রজীবদের পুষ্টি জোগায়, যারা আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার প্রায় ৮০% নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই যৌগ স্তন, কোলন ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সক্ষম।

 

২. সাইট্রাস ফল (লেবু, কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা)

এই ফলগুলো শুধু যে ভিটামিন সি-তে সমৃদ্ধ তা নয়, এগুলোতে থাকে শক্তিশালী ফ্ল্যাভোনয়েডস, যা শরীর থেকে ক্যানসার সৃষ্টিকারী বিষাক্ত উপাদান দূর করতে লিভারকে সহায়তা করে। নিয়মিত লেবুজল পান কিংবা সাইট্রাস জাতীয় ফল খেলে হজমতন্ত্রে ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস পেতে পারে।

 

৩. ডালিম (Pomegranate)

ডালিমে রয়েছে এলাজিক অ্যাসিড, যা ডিএনএর ক্ষয়রোধ করে ও কোষকে ক্যানসারে রূপান্তরিত হতে বাধা দেয়। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং প্রদাহরোধী উপাদান শরীরকে দীর্ঘমেয়াদে রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে।

 

৪. আঙুর (Grapes)

আঙুরের রেসভেরাট্রল নামক এক ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট বার্ধক্য বিলম্বিত করতে এবং কোষকে ক্যানসারের আগ্রাসী রূপ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম। এটি কোষের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে সেগুলোর ভিতর প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

 

৫. টমেটো

হ্যাঁ, টমেটো প্রকৃত অর্থে একটি ফল। এতে লাইকোপেন নামের এক অতি কার্যকর অ্যান্টি-ক্যানসার যৌগ থাকে, যা রান্না করলে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন রঙের টমেটোতে বিভিন্ন ধরনের উপকারী উপাদান থাকে। গবেষক হিসেবে আমি নিজেই টমেটোর নানা প্রজাতি নিয়ে কাজ করছি—কোনটি পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত, কোনটির স্বাদ উন্নত, কোনটিতে পুষ্টিগুণ বেশি—এসব যাচাই করছি ল্যাব পরীক্ষার মাধ্যমে।

 

৬. অ্যাভোকাডো

অ্যাভোকাডোতে রয়েছে গ্লুটাথায়ন—এক দুর্দান্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান থেকে কোষকে রক্ষা করে। এ ছাড়াও এতে থাকা উপাদান ক্যানসারের শিকড়—ক্যানসার স্টেম সেলকেও ধ্বংস করতে পারে।

 

জলপাইয়ের মধ্যে অ্যালোপেন ও হাইড্রক্সিটাইরোসল নামের উপাদান থাকে, যা ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি প্রতিহত করে। এরা কোষকে আত্মহত্যার নির্দেশ দেয়, অর্থাৎ অসুস্থ কোষকে নিজের ক্ষয় করে শরীরকে রক্ষা করতে বাধ্য করে।

 

তাহলে উদ্ভিদ কীভাবে তৈরি করে এই অসাধারণ যৌগগুলো?

উদ্ভিদ তো চলাফেরা করতে পারে না। তাই পরিবেশের প্রতিকূলতা যেমন অতিবেগুনি রশ্মি, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, কীটপতঙ্গ থেকে বাঁচতে নিজেদের ভেতরেই তৈরি করে নিয়েছে নানা প্রতিরক্ষা উপাদান। এই যৌগগুলোই মানুষ খেলে শরীরেও রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে।

এই ফাইটোকেমিক্যালগুলো প্রদাহ কমায়, খারাপ কোষগুলো খেয়ে ফেলে ‘অটোফেজি’ প্রক্রিয়ায়, এবং শরীরকে শেখায় কীভাবে ক্ষুদ্র ক্ষতিকর চাপের সঙ্গে লড়তে হয়। মনে রাখবেন—সন্তান যদি কখনও অসুস্থ না হয়, তার রোগপ্রতিরোধ গড়ে ওঠে না। তেমনই সামান্য চাপ শরীরকে শক্ত করে।

 

শেষকথা

হ্যাঁ, ফলে চিনিও থাকে। কিন্তু সেই চিনির সঙ্গে থাকে আঁশ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটোকেমিক্যাল—যা শরীরে সেই চিনির প্রভাবকে ভারসাম্য দেয়। তাই ফল কখনই চকোলেট বা মিষ্টির মতো নয়।

 

সত্যি বলতে গেলে এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, অথচ প্রচলিত কেমোথেরাপির ভয়াবহতা আমাদের সকলেরই জানা।

সুতরাং প্রকৃতিকে বুঝুন, গ্রহণ করুন, ও সুস্থতার দিকে এগিয়ে যান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *