ক্যান্সার চিকিৎসায় বিপ্লব আনছে এআইঃ বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত?

একসময় ক্যান্সার মানেই ছিল ভয়াবহ এক যুদ্ধ—যেখানে রোগীর শরীরের সঙ্গে লড়াই করতো কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন আর যন্ত্রণা। চিকিৎসা যত উন্নতই হোক, এসব পদ্ধতি রোগের পাশাপাশি শরীরের সুস্থ কোষগুলোকেও ধ্বংস করতো। কিন্তু এখন সময় পাল্টাচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করছে—এবং এটি ভবিষ্যতে ক্যান্সার চিকিৎসার চেহারাই বদলে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে শুরু নতুন যুগ

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক সম্প্রতি এমন এক গভীর শেখার (deep learning) প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যার নাম BigMHC। এই প্রযুক্তি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে নির্দিষ্টভাবে সক্রিয় করে তোলে। সাধারণত ক্যান্সার কোষগুলোর গায়ে কিছু বিশেষ প্রোটিন বা অ্যান্টিজেন থাকে, যেগুলোকে শনাক্ত করে শরীরের টি-সেল (সাদা রক্তকণিকা) আক্রমণ চালাতে পারে। BigMHC এই অ্যান্টিজেনগুলোকে চিহ্নিত করে, এবং জানিয়ে দেয় কোন ক্যান্সার কোষ কতটা বিপজ্জনক, কিংবা কীভাবে তাকে নিধন করা যাবে।

এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একেকজন রোগীর শরীরের উপযোগী করে তৈরি করা যাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক ইমিউনোথেরাপি—যেটা শরীরের নিজের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করবে, তাও কেমোথেরাপির মতো বিধ্বংসী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।

ভবিষ্যতের রোগ নির্ণয়: আগে থেকেই সতর্কতা

এদিকে এমআইটি-তে তৈরি হয়েছে আরও একটি আশাব্যঞ্জক প্রযুক্তি, যার নাম Sybil। এটি এমন একটি এআই যন্ত্র, যা ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি ছয় বছর আগেই নির্ণয় করতে পারে শুধুমাত্র সিটি স্ক্যান বিশ্লেষণ করে। এমনকি হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকরা অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার তিন বছর আগেই শনাক্ত করার সক্ষমতা পেয়েছেন এআই-এর সাহায্যে। যেসব ক্যান্সার সাধারণত শেষ ধাপে ধরা পড়ে এবং জীবিত থাকার সম্ভাবনা থাকে খুবই কম, সেগুলোর ক্ষেত্রেও এখন আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশের বাস্তবতা

তবে প্রশ্ন হলো—বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত এই বিপ্লবের অংশ হতে?

বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসা এখনও অনেকাংশে শহরকেন্দ্রিক এবং ব্যয়বহুল। সরকারি হাসপাতালগুলোতে কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের সুযোগ থাকলেও ব্যক্তিকেন্দ্রিক ইমিউনোথেরাপির মতো উন্নত পদ্ধতি এখনও অনেক দূরের স্বপ্ন। তবে সুখবর হলো, দেশের কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও মেডিকেল গবেষণা সংস্থা ইতিমধ্যে এআই-ভিত্তিক রোগ নির্ণয় ব্যবস্থার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছে।

স্বাস্থ্যখাতে ডিজিটাল রেকর্ড সংরক্ষণ এবং রোগীর জেনেটিক তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও এআই ব্যবহার করে আগেভাগে ক্যান্সার শনাক্ত এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করা সম্ভব হতে পারে।

নতুন আশার আলো

এআই-এর সহায়তায় যদি রোগ নির্ণয় হয় আরো দ্রুত, চিকিৎসা হয় ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন—তাহলে ক্যান্সার হয়তো আর “মরণব্যাধি” বলে গণ্য হবে না। বরং সময়মতো ধরা পড়লে এটি হবে আরেকটি নিয়ন্ত্রিত রোগ, যেটি থেকে মানুষ ফিরে আসবে পুরোদমে সুস্থ হয়ে।

বাংলাদেশে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দরকার—এআই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ, স্বাস্থ্যখাতে গবেষণা বাড়ানো, এবং জনসচেতনতা তৈরি করা। তাহলেই একদিন হয়তো ঢাকাতেও কোনো হাসপাতালে বসে একজন রোগী বলবে—”আমার ক্যান্সার ধরা পড়েছিল, কিন্তু এখন আমি সুস্থ। ধন্যবাদ এআই!”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *